Sunday, August 17, 2025

রাষ্ট্রপতি অপসারণ ও সংবিধান বাতিলের ইস্যুতে আলোচনা

আরও পড়ুন

রাষ্ট্রপতি অপসারণ ও সংবিধান বাতিলের ইস্যুতে আলোচনা
রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও সংবিধান বাতিলসহ নানা ইস্যুতে ১২ দলীয় জোট ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। রোববার বিকালে প্রথমে মালিবাগে ১২ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও পরে গণধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তারা এ বৈঠক করেন।

বৈঠক সূত্র জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ছাত্রনেতাদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি অপসারণ ছাড়াও সংবিধান বাতিল ও ‘প্রক্লেমেশন অব সেকেন্ড রিপাবলিক’ ঘোষণার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সংবিধানে ৫ আগস্টের মূল স্পিড তুলে ধরার পাশাপাশি মুজিববাদকে চিরতরে মুছে ফেলার কথাও বলেছেন ছাত্রনেতারা। বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন বাতিল, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথাও বলেছেন কেউ কেউ। তবে রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, সংবিধান পরিবর্তন বা পুনর্লিখন ছাত্রদের কাজ নয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল শক্তির ভিত্তিতে তারা দেশের সব অংশীজনের কাছে এ বিষয়ে মতামত নিতে পারেন। যাতে নির্বাচন পরবর্তী সরকার এ কাজ করতে পারে। এটা রাজনৈতিক দলের গঠিত সরকারের কাজ বলে জোট নেতারা তাদের জানান। রাষ্ট্রপতি অপসারণের বিষয়ে সব দলের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কথাও বলছেন কেউ কেউ।

বৈঠক শেষে ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘নীতিগতভাবে রাষ্ট্রপতি অপসারণের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। কত দ্রুত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। পুরো জাতি এক হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেন উপনীত হওয়া যায়, সেটি আমরা চাই।’

আরও পড়ুনঃ  রাফাজুড়ে চলছে ইসরায়েলি তাণ্ডব, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ২১

অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের ব্যর্থতা সমগ্র দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণত বয়ে আনবে। এ সরকারের সাফল্য চাই। যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চাই আমরা। তাই গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনে বিএনপিসহ যারা মাঠে ছিল, তাদের সবার মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানাই।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে চলে যেতে হবে। এ বিষয়ে সবাই নীতিগতভাবে একমত। তবে চলে যাওয়া বা অপসারণের প্রক্রিয়া কী হবে সেটা নিয়ে রাজনৈতিকভাবে ঐকমত্যের দরকার আছে। সেজন্য আমরা আলোচনা করছি।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান রাষ্ট্রপতি ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের দোসর। খুনি হাসিনার হাত ধরেই তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। এই খুনি ফ্যাসিবাদীর দোসরের রাষ্ট্রপতি থাকার অধিকার নেই, তাকে বিদায় নিতেই হবে। এ বিষয়ে আজকে ১২ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, ‘বিএনপিকে আহ্বান জানাব জনগণের পালস বোঝেন। প্রেসিডেন্ট হাউজে যে গোখরা সাপ বসে আছে, তাকে বিদায় করতে সহযোগিতা করুন।’

আরও পড়ুনঃ  ছাত্রদল নেতাকে কোপালো নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা

এদিকে সন্ধ্যায় গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা আলোচনায় অংশ নিচ্ছি। যারা গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল তারা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে। এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আমাদের মতের বিরোধিতা করেনি। গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে। এটা যেন আরও গতিশীল হয়, সেজন্য কাজ করা হচ্ছে। এই কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে শহিদ ও আহত পরিবারকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি অবৈধ রাষ্ট্রপতি এই পদে থাকতে পারেন না। দেশে যে সংকট চলছে এই সংকট থেকে উত্তরণে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। একই সঙ্গে জাতীয় সরকার প্রচলন করার বিকল্প নেই। এ বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করেছি। বৈঠকে তাদের দাবির সঙ্গে আমরা নৈতিকভাবে একমত পোষণ করেছি।’

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বিভিন্ন দল বিভিন্ন রকম বক্তব্য দিচ্ছে। এসব দলকে কারা ঐক্যবদ্ধ করবে? সব দল যদি একমত পোষণ না করে, তাহলে রাষ্ট্রপতিকে সরানো যাবে না। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে তাকে অপসরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।

আরও পড়ুনঃ  ‌‌‘আওয়ামী লীগের পর বিএনপিকেও মাইনাসের ষড়যন্ত্র চলছে’

ছাত্রনেতাদের মধ্যে বৈঠকে অংশ নেন-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, সমন্বয়ক সারজিস আলম, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, নাগরিক কমিটির পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আদিব মমিন আরিফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ প্রমুখ।

বৈঠকে ১২ দলীয় জোটের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ লেবার পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান লায়ন মোহাম্মদ ফারুক রহমান, ইসলামিক ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল করিম প্রমুখ। গণঅধিকার পরিষদের পক্ষে দলের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতিমা তাসনিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, রবিউল ইসলাম, সহ-আইন সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রমুখ।

এর আগে শনিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক এ বৈঠক করছেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ