Monday, August 18, 2025

উপদেষ্টা নাহিদের সম্মাননা গ্রহণ না করাকে ‘শিশুসুলভ কাজ’ বললেন সেই শিক্ষক

আরও পড়ুন

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভার মঞ্চে বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক নেতা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর কলাম লেখককে স্মারক সম্মাননা দেয়ার প্রতিবাদে নিজের স্মারক সম্মাননা গ্রহণ না করার ঘটনাকে ‘শিশু সুলভ কাজ’ বলে দাবি করেছেন অভিযোগ ওঠা কলা অনুষদের দিন ড. শফিকুর রহমান। এতে কলা অনুষদকে অপমানিত করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। নিজের ফেসবুক পোস্টে এই দাবি করেন ড. শফিক।

শনিবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার পরে নিজের ফেসবুক আইডিতে এই পোস্ট করেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে ড. শফিক দাবি করেন ‘আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর সর্বপ্রথম কলা অনুষদ শোক প্রস্তাব জানিয়েছিলো। আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর কলা অনুষদের ডিন জানাজায় ছুটে গিয়েছিলো। আজকে কলা অনুষদের ডিনের দিকে আঙুল তুলে অসম্মান করা হলো।

ব্যক্তি আর অনুষদের ডিন দুইটা আলাদা বিষয়। অনুষদের ডিনকে অসম্মান করা মানেই গোটা অনুষদকে অসম্মানিত করা। আজকে কলা অনুষদকে মঞ্চে তুলে অসম্মানিত করা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর বক্তব্য শুনে কোনোরূপ যাচাই-বাছাই ছাড়াই উপদেষ্টা নাহিদের সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখান করা অত্যন্ত শিশুসুলভ কাজ হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সরকারের প্রশংসা করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অনুষদের এই অসম্মানে আমি ভীষণ মর্মাহত।’

শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর সোয়া ২টায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারকমঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাকি ইসলাম। ওই প্রেক্ষাপটে অভিযোগ ওঠা শিক্ষক কলা অনুষদের দিন ড. শফিকুর রহমানের (শফিক আশরাফ) এই ফেসবুক পোস্ট।

যেভাবে উঠে আসে ঘটনা
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়ার পর মঞ্চের সামনে থাকা পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম এবং গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম তাকে প্রশ্ন করেন।

নাহিদ ইসলামকে লক্ষ করে রাইসুল ইসলাম বলেন, আপনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই বলতে চাই যারা এখনো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং দোসর রয়েছে। সেই দোসররা এখনো বলবৎ আছে। আমাদের এই মঞ্চে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. কমলেশ রায় আছেন। উনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। ওই পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মশিউর রহমান, যিনি ছাত্রদের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আজ মঞ্চে এবং তাকে সম্মাননা স্মারক দেয়া হলো। মঞ্চে কলা অনুষদের ডিন ড. শফিকুর রহমান স্যার উপস্থিত আছেন। তিনি বিগত ১৩ আগস্ট দৈনিক কালের কণ্ঠে একটি কলাম লেখেন। যেখানে উনি সেই কলামে লিখেছিলেন আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পরও পরিস্থিতি সামলানোর পর্যায়ে ছিল।

আরও পড়ুনঃ  পূর্বাচল লেক থেকে উদ্ধার তরুণীর মরদেহের পরিচয় মিলেছে

আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে চাই আবু সাঈদের প্রাণের বিনিময়ে আর কি সামলানোর মতো ছিল, সেটা আমরা জানতে চাই। ওনার কাছে আমরা ব্যাখ্যা চাই। ওনাকেও স্মারক সম্মাননা দেয়া হলো। তাহলে তখন আমরা আন্দোলন করে যদি আমরা আজ এই দিনটা দেখতে পাই। যারা স্বৈরাচারের দোসরগিরি করেছেন। তাদেরকে সম্মামনা স্মারক দেয়া হচ্ছে। মঞ্চে বসানো হচ্ছে। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।

প্রশ্নের উত্তর দিতে আবারো মাইকে আসেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারে থেকেও বিভিন্ন জায়গায় বলেছি। যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারাও একথাটি বলছেন, আমাদের অভ্যুত্থান শেষ হয়ে যায়নি। এই অভ্যুত্থানকে আরো বিপ্লবে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে আরো একটি গণ-অভ্যুন্থানও করতে হতে পারে। কারণ আমরা মনে করছি, ফ্যাসিস্ট কাঠামো এখনো রয়েছে। আমাদের একদফা দাবি ছিল সেই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ ঘটনো। সেটি যেমন রাষ্ট্রে, সমাজে একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়েও।’

আরও পড়ুনঃ  সেই ছাত্রদল নেতার সব পদ কেড়ে নেওয়া হলো

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই [রোকেয়া] বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি এসেছেন। তার কাছে আমার আবেদন থাকবে যাতে এসব বিষয়কে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেন। আপনারা যে অভিযোগ করলেন বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু এই মঞ্চ থেকে যারা ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগ এবং স্বৈরাচারের দোসর তাদেরকে স্মারক সম্মাননা দেয়া হয়েছে। ফলে একই মঞ্চ থেকে আমাকে যে সম্মাননাটি দেয়া হয়েছে এটি আমি গ্রহণ করছি না। হয়তো কোনো একদিন ফ্যাসিবাদমুক্ত এই বেরোবিতে আসবো। আপনাদের সকল দাবি দাওয়া পূরণ করার সক্ষমতা নিয়ে আপনাদের সামনে এসে দাঁড়াবো। সেদিনই আমি এই সম্মাননাটি গ্রহণ করবো।’

পরে মঞ্চে থাকা অভিযুক্ত কলা অনুষদের ডিন ড. শফিকুর রহমান নিজেই মাইকের সামনে আসেন। তিনি দাবি করেন, তার কলাম আন্দোলনের বিপক্ষ ছিল না। তবুও যেহেতু শিক্ষার্থীরা আমার কলামকে ভালোভাবে নেননি। সে কারণে আমি আজকের সম্মাননা স্মারক প্রত্যাহার করে নিলাম। এরপর তিনি মঞ্চে বসে থাকা অভিযুক্ত আরেক শিক্ষক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি ড. কমলেশ রায়ের পাশে গিয়ে বসেন। নাহিদ ইসলাম মঞ্চ ছাড়ার পর তারা মঞ্চ ছাড়েন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ