Saturday, June 28, 2025

শেখ হাসিনার পতনের দুই মাস আজ

আরও পড়ুন

পরপর তিনবার ভোটারবিহীন নির্বাচন। রাষ্ট্রের ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নির্লজ্জ দলীয়করণ। বিরোধী মতের সাংবাদিক, আইনজীবীসহ পেশাজীবীদের প্রতি নিষ্ঠুর জাঁতাকল। মুখ বন্ধ রাখতে তৈরি করা হয় অন্ধকার প্রকোষ্ঠ আয়নাঘর। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে ভেঙে দেওয়া হয় দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। গণমানুষের যে কোনো যৌক্তিক দাবিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহার করে চালানো হয় দমনপীড়ন। এগুলো শেখ হাসিনা সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরের শাসন-শোষণের চিত্র। অবশেষে ফ্যাসিবাদী এই শাসনের অবসান হয় গত ৫ আগস্ট। ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ৫ অক্টোবর ঐতিহাসিক এ ঘটনার দুই মাস পূর্ণ হলো।

আরও পড়ুনঃ  জাতিকে ভাগ করার সুযোগ আর নয়: জামায়াত আমির

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দুই মাস আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে পড়ে। তবে সেই অবস্থা থেকে উত্তরণে ছাত্র-জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৮ আগস্ট দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ

করেন। ড. ইউনূসের দায়িত্বভার গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশ চার দিনের নেতৃত্বশূন্য পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে পরিস্থিতি। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ এবং দমনপীড়নের কারণে ভেঙে পড়েছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সেটি স্বাভাবিক করতে আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। পুলিশ প্রশাসনে এসেছে বড় রদবদল।

এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই ড. ইউনূস গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থাগুলোতে বড় আকারে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতিবিদকে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ দিয়েছেন, যাতে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেন। একই সঙ্গে ড. ইউনূস আরেকজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদকে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলের সুবিস্তৃত দুর্নীতি বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছেন। অর্থনীতিতে এখনো নানা সমস্যা থাকলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  কোটা আন্দোলন সরকারবিরোধীরূপ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে : কাদের

এ ছাড়া পররাষ্ট্রনীতিতেও নিয়েছেন বেশকিছু সাহসী ভূমিকা। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের পাশাপাশি নিয়েছেন বেশকিছু পদক্ষেপ। বৈঠক করেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে। এ ছাড়া আইন-আদালত, গণমাধ্যম, দুদক, অর্থনীতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব অনুষঙ্গকে সংস্কার করতেও বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

হাসিনার পতনের এই দুই মাসে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ হারিয়ে গেছে অনেকটা। কারণ, দলটির প্রায় সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পলাতক। শীর্ষ নেতারা বেশিরভাগ জেলে। অনেকে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। কোনো দলীয় কর্মসূচি নেই। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিবস ১৫ আগস্টও পালন করেনি দলটির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী। শেখ হাসিনার জন্মদিনেও কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ ছিল না। অথচ ক্ষমতায় থাকাকালীন সারা দেশে ১৫ আগস্ট পালন করা হতো মহাসমারোহে। শেখ হাসিনার জন্মদিনেও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও নানা আয়োজন করতেন। এমনকি প্রথম অবস্থায় দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে কোনো বিবৃতিও পাঠানো হয়নি। এক মাস ধরে মাঝেমধ্যে দলটির নেতাদের নামে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  আমরা কখনো তাকে প্রধানমন্ত্রী বলতাম না: চরমোনাই পীর

সর্বশেষ সংবাদ