Monday, August 18, 2025

বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা, ইলিশ নিয়ে যাচ্ছে ভারতের জেলেরা

আরও পড়ুন

একই সাগরে দুই নিয়ম। উৎপাদন বাড়াতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা মেনে বাংলাদেশিরা ঘাটে নৌকা নোঙর করে রাখলেও বঙ্গোপসাগরে অবাধে মাছ শিকার করেন ভারতের জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ মানলেও সাগরের ইলিশসহ সবধরনের মাছ নিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী ওই দেশ। তাই সামুদ্রিক মাছের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারে দেয়া নিষেধাজ্ঞা কাজে আসছে না; মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সুফলও। এতে ক্ষতির অভিযোগ করছেন বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলভাগের জেলেরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে, বছরের ১২ মাসের প্রায় তিন মাসেই নানাভাবে নদী-সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। মাছের প্রজনন, উৎপাদন বাড়াতে সরকার নির্দিষ্ট সময়ে শিকার বন্ধ রাখার ঘোষণা দিলেও, প্রতিবেশী দেশ ভারতে ওই সময়ে চলে অবাধে মাছ শিকার।

বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলভাগে জেলেদের অভিযোগ, কাঙ্ক্ষিত সুফল তো মেলেই না, বরং বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা ছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাছের প্রজনন সময় পরিবর্তিত হয়েছে বলেও মত তাদের।

আরও পড়ুনঃ  শাহবাগ থানায় ঢুকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করলেন ঢাবির ৪ শিক্ষক

জেলেরা জানান, মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন বৃদ্ধি, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, মা ইলিশ রক্ষা এবং টেকসই মৎস্য আহরণে বছরে দুই দফা মাছ শিকারে সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ নিয়ে জেলেদের রয়েছে অভিযোগ।

বাংলাদেশে যখন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে, তখন ভারতে চলে মাছ শিকার জানিয়ে স্থানীয় জেলেরা বলেন, ‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকে আমাদের; এ সময় ভারতের জেলেরা অবাধে সাগরে মাছ শিকার করেন। আমরা চাই আমাদের সঙ্গে ওই দেশেরও মাছ শিকার বন্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞাটা তিন দেশেই যেন একসঙ্গে মানা হয়।’

আরও পড়ুনঃ  যৌতুকের জন্য নিভে গেল মধুর জীবন

মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, ভারতে এলাকা ভেদে ১৫ ‍এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৬১ দিন ও মিয়ানমারে ১৬ মে থেকে ৩১ ‍আগস্ট ৯১ দিন সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। অথচ, বাংলাদেশে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।

মৎসজীবী নেতারা জানান, ইলিশ সংরক্ষণে বছরে দুই দফায় ৮৭ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনে মাছের ঋতুচক্র পাল্টে যাওয়া এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা না রাখায় বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ মৎস্য শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘৬৫ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা আছে, আমরা এটার সময়সীমা কমাতে চাই এবং একই সময় বাংলাদেশের সঙ্গে যেন ভারত ও মিয়ানমারেও নিষেধাজ্ঞা থাকে সেদিকটা ভেবে দেখা হচ্ছে।’

আরও পড়ুনঃ  মসজিদের মিম্বার থেকে দুই দেশকে সতর্কবাতা বিদ্রোহী নেতার

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎসজীবী জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মীর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় প্রত্যেক জেলে পরিবারকে ৬০ কেজি চাল এবং নগদ পাঁচ হাজার টাকা দেয়ার দাবি করছি।’

এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগের মৎস্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ‘জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এর পরিবর্তনের সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা করে এই সময়টা আগে-পিছে করা যেতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে সমন্বয় কতোটুকু করা যায়, সেটাও আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করবো।’

মৎস্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৩ জন মৎস্যজীবী রয়েছেন। আর বিভাগে প্রতিবছর ‍‍ইলিশসহ মোট মাছের উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৯২ হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ