Thursday, July 24, 2025

জামায়াত শাপলাকে, আ.লীগ শাহবাগকে ‘প্রক্সি’ হিসেবে ব্যবহার করেছে

আরও পড়ুন

২০১৩ সালে জামায়াত যেমন সফলভাবে শাপলা চত্বরকে ‘প্রক্সি’ হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছে, আওয়ামী লীগও শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ব্যবহার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

তিনি বলেন, শাহবাগে যারা গিয়েছিল একটা বড় অংশ ‘চেতনা’র অন্ধতায় পড়ে গিয়েছিল। এমনকি শাহবাগে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্র-তরুণই তাদের ভুল বুঝতে পেরে মুজিববাদী বয়ানের বাইরে যেতে চেয়েছেন।

বুধবার (১২ মার্চ) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব আইডিতে শাহবাগ আন্দোলন ও জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দেওয়া দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

শুরুতে মাহফুজ আলম বলেন, জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল কিন্তু নাহিদ ইসলাম যেভাবে বলেছেন এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা কাফ্ফারা দিয়েছেন। আমিও বলেছি, জামায়াতের যারা বাংলাদেশপন্থী তারা এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখেন। জামায়াতের নতুন প্রজন্মের অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে কেউই পাকিস্তানপন্থী নন। ফলে স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগ দিয়ে জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা যাবে না। রাজনৈতিক ও আদর্শিক লড়াই করেই তাদের বিরুদ্ধে জিততে হবে। তাদের প্রোপাগান্ডা ওয়ারের জবাব দিতে হবে সত্য দিয়ে।

শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, শাহবাগে যারা গিয়েছিল একটা বড় অংশ চেতনার অন্ধতায় পড়ে গিয়েছিল। অনেক ছাত্র-তরুণ ইসলামবিদ্বেষ থেকে না বরং নিছক যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবিতে গিয়ে উপস্থিত ছিল। তরুণ প্রজন্মের আবেগকে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থিদের মুজিববাদী অংশ কাজে লাগিয়ে এদেশে মবোক্রেসি কায়েম করেছিল। যার ফসল ছিল দীর্ঘ এক দশকের ফ্যাসিবাদী দু:শাসন-বিরোধীদলীয় কর্মীদের গুম, খুন, ধর্ষণ ও নিপীড়ন।

আরও পড়ুনঃ  মেয়েরা যেন আমার মরামুখ না দেখে, মৃত্যুর আগে বাবা

উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, শাহবাগে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্র-তরুণই তাদের ভুল বুঝতে পেরে মুজিববাদী বয়ানের বাইরে যেতে চেয়েছেন। গত কয়েক বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা অংশীজন ছিলেন। আহতও নিহত হয়েছেন। তারা আমাদের সহযোদ্ধা। এ অভ্যুত্থানে শক্তিশালী ভূমিকা রেখে তারা লীগ ও মুজিববাদের পরাজয় নিশ্চিত করেছেন। তারা ইতোমধ্যে তাদের রাজনৈতিক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত তথা কাফ্ফারা আদায় করেছেন।

শাপলা চত্বরের আন্দোলন নিয়েও উপদেষ্টা বলেন, আমি নিজে শাপলায় এসেছিলাম লংমার্চে নবীর প্রতি ভালোবাসায়। ৫ই মে তে আমি আসতে পারিনি। কিন্তু, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামায়াত নেতাদের ভূমিকা নিয়ে আমাদের আগ্রহ ছিল না। আমরা মূলত নবীজির সম্মান ও ভালোবাসা সামনে রেখে ঢাকায় এসেছিলাম। আমি যে মাদ্রাসায় পড়েছি, সেখানে জামায়াত নেতাদের ভ্রান্ত আকিদার অনুসারী হিসেবে গণ্য করা হত। আর, জামায়াত নেতাদের ফাঁসিকে দেখা হত তাদের আলেম ও সহি ইসলাম বিরোধিতার ফসল হিসেবে। জামায়াতকে আমরা ছোটবেলা থেকে আলেম-ওলামা বিরোধী হিসাবেই জেনে এসেছি।

তিনি লেখেন, অনেকেই হয়ত খেয়াল করেন না, অধিকাংশ শাপলার কর্মীরাই আসলে জামায়াতের আকিদা (বিশ্বাস ও কর্মপন্থা) ও নেতৃত্ব বিরোধী। শাপলার অনেক নেতৃত্বই জামায়াতের আলেম ও পীরপন্থা বিরোধিতার শিকার। এমনকি অনেকেই জামায়াত ও শিবির নেতাদের কর্তৃক নিগৃহীত ও নিপীড়িত হয়েছেন। কিন্তু, জামায়াত সফলভাবেই তাদের প্রক্সি হিসাবে ব্যবহার করতে পেরেছে। যেমন- লীগ শাহবাগীদের ব্যবহার করেছে।

আরও পড়ুনঃ  আজ শুক্রবার জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় মাসব্যাপী লিফলেট বিতরণ উদ্ভোবনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আবদুস সালাম। ছবি : এনটিভি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে শুধু দলের নয়, পুরো দেশের দায়িত্ব নেবেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়া মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। আজ শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় মাসব্যাপী লিফলেট বিতরণ উদ্ভোবনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুস সালাম এসব কথা বলেন। আবদুস সালাম বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর মানুষ গণতন্ত্রের স্বাদ পায়নি। দেশের মানুষ নির্যাতিত-নিপীড়িত ছিল। আওয়ামী দুঃশাসনের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারেনি। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সব কিছু ধ্বংস করেছে। তাই আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় আসে, আবার সবকিছু ধ্বংস করবে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। আজকে যারা নির্বাচন পেছাতে চায় তারা আবারও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে চায় কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে আবদুস সালাম বলেন, আজকে দেশ সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। আর আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফার মধ্যমে দেশের সব কিছু সংস্কারের কথা অনেক আগেই বলে দিয়েছি। আপনারা দেশের সংস্কারের কথা বলছেন? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংস্কারের উদাহরণ হলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান যে সংস্কার করেছেন, বাংলাদেশে ওই সংস্কার আর কেউ করতে পারবে না। আবদুস সালাম আরও বলেন, আজকে শেখ হাসিনা বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো অবস্থান করছে। তাই আপনাদেরকে যার যার এলাকায় সুসংগঠিত হতে হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে আপনাদের বলতে চাই, বিএনপি সব সময় আপনাদের সাথে আছে। আবদুস সালাম বলেন, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে, মোহাম্মদপুরে অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। সেই বীরদের আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আমরা গত ১৭ বছরে অনেক নেতা-কর্মী হারিয়েছি। অনেকে আহত হয়েছে। আমাদের যুবদলের নেতা রফিককে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছিল। সে সব ঘটনা আমরা ভুলে যাই নাই। তাই আমরা আওয়ামী দোসরদের বলতে চাই, আর মাঠে নামার চেষ্টা করিয়েন না। এবার আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। ইনশাআল্লাহ্, জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। যারা সীমান্তের ওপারে বসে ষড়যন্ত্র করছেন, তারা কী সীমান্তের এপারে আসতে পারবে? এবার আর ভারতে বসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানানো যাবে না, হওয়াও যাবে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ ইকবাল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি যুগ্ম-আহ্বায়ক হাজী ইউসুফ, মহিলা দলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট রুনা লায়লা, জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জামাল হোসেনসহ মোহাম্মদপুর, আদাবর এবং শেরেবাংলা নগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

উপদেষ্টা মনে করেন, আমরা অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে উপনীত হয়েছি। এখানে জামায়াতকে বা শিবিরের কর্মীদের রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী বলে বোধযোগ্য করার যে বয়ান সেটার বিরোধী আমরা। তেমনি, শাহবাগের ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান। এ ইসলামফোবিয়ার শিকার আমি নিজে হয়েছি। পাঞ্জাবি টুপি পরলেই জঙ্গিবাদী বলা থেকে শুরু করে মাদ্রাসা ছাত্রদের ও আলেমদের বিমানবিকীকরণের জন্য শাহবাগ দায়ী। শাহবাগের সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ঊন-মানুষে পরিণত করেছিল।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে একটি সংলাপমুখর সময় এসে উপস্থিত হয়েছে। শাপলা-শাহবাগের বাইনারির বাইরে এসে শাহবাগের প্রাণভোমরা-মুজিববাদ, ভারত পন্থা ও শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে পুরাতন শাপলা ও শাহবাগের কর্মীদের কমরেডস হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। আসলে, শাপলা-শাহবাগের কর্মীরা কমরেডস হয়েছিল বলেই শেখ হাসিনার পতন ঘটেছিল। শাপলার নেতৃত্বের জন্যও কারো প্রক্সি না হয়ে রাষ্ট্রে ইজ্জত ও শরিকানা দাবির সুন্দর সুযোগ উপস্থিত হয়েছিল।

মাহফুজ আলম আরও লেখেন, আমি আমার আগের দুটি পোস্টে আলেম-ওলামাদের ধন্যবাদ দিয়েছিলাম তাদের শক্তিশালী ভূমিকার জন্য। তৌহিদবাদী জনতার নেতৃত্ব যেন ফ্রিঞ্জ এলেমেন্টের হাতে না গিয়ে মূলধারার হকপন্থী আলেমদের হাতে থাকে, এ আশা রাখি। মূলধারার আলেমরা আশা করি গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে, দেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে শাহবাগের মবোক্রেসি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। নিজেরা সে সংস্কৃতির অনুকরণ করবেন না। এক্ষেত্রে আমরা মজলুম ও গণতান্ত্রিক মূলধারার আলেমদের পক্ষেই থাকব।

আরও পড়ুনঃ  ঢাকায় সেনাবাহিনীর গাড়িতে ‘আগুন দেওয়া’ তরুণকে নেত্রকোনা থেকে আটক

উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন, সাবেক শাহবাগী যারা অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে নিজেদের ন্যায্য অবস্থান ব্যক্ত করেছেন, লড়াই করেছেন- তাদেরকে কোনোভাবেই বধযোগ্য করে তোলা যাবে না। যাকে তাকে শাহবাগী ট্যাগ দিয়ে অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে বৃহত্তর সংহতির সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করা যাবে না। শাপলাপন্থী কেউ যদি ভাবেন, লীগ বিরোধী ও অভ্যুত্থানের পক্ষের সাবেক শাহবাগীদের শত্রু ও বধযোগ্য বানিয়ে তারা সফল হবেন, তা কিন্তু হবে না। আপনি শাপলার হয়ে মবোক্রেসি ও বিচারহীনতার দাবি করলে আপনিও তো শাহবাগী হয়ে উঠবেন, নাকি? বামপন্থিদের মধ্যে যারা মুজিববাদ বিরোধী, তারা কিন্তু অনেক আগে থেকেই শাপলার হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন (ছবি সংযুক্ত)। ফলে, শত্রু-মিত্র ফারাক করা আমাদের জন্য খুবই জরুরি।

মাহফুজ আলম আরও লেখেন, তবে, পুরাতন শাহবাগী, যারা এখনো শাহবাগের প্রাণভোমরা-মুজিববাদ, ভারতপন্থা ও শেখ পরিবারের প্রতি আনুগত্যকে নিজেদের আদর্শ বলে মনে করেন, তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া উচিত হবে না। এরাই গুম ও গণহত্যার উসকানি দিয়েছিল ও ন্যায্যতা তৈরি করেছিল। জুলাই গণহত্যার সময়ও এরা চুপ ছিল, কেউ কেউ বৈধতা উৎপাদনে ব্যস্ত ছিল। বিদেশ থেকে এখনো যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে সাফাই গাইছে, এদের একটা বড় অংশ শাহবাগের ফ্যাসিবাদী। এরা জনগণের শত্রু, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের শত্রু, গণ-অভ্যুত্থানের শত্রু। এদের বিচার শুরু হয়েছে, শেষ ও হবে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ