Wednesday, March 19, 2025

ঢাবির পরীক্ষার হলে হিজাব-নিকাব নিয়ে ফের বিড়ম্বনা ভুক্তভোগীর দীর্ঘ স্ট্যাটাস

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পরীক্ষার হলে ফের হিজাব-নিকাব নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন এক নারী শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীরা নাম তাহমিনা আক্তার তামান্না। তিনি বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী। আজ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার পর হিজাব-নিকাব নিয়ে বিড়ম্বনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নিয়ম পরিবর্তন চেয়ে ভুক্তভোগী ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পরে স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হলে তা নিয়ে চলে আলোচনা-সমালোচনা।

জানতে চাইলে বাংলা বিভাগের চেয়ারমান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার হলে কিংবা ভাইভা-প্রেজেন্টেশনে এ নিয়মটি (হিজাব-নিকাব খোলা রাখা) কেন্দ্রীয়ভাবে রয়েছে। এটা তো সবাইকে মেনে নিতে হবে। ওই শিক্ষার্থীও সেটা মেনে নিয়েছে। আজকের এই ঘটনাটি আমার জন্য বড় যন্ত্রণাদায়ক। কেননা তার চেয়েও বড় আমার সন্তান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর আমি ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। এটি সেন্ট্রালি পরিবর্তন হোক সেটা আমরাও চাই। এজন্য আমি ডিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ভবিৎষতে যাতে এ ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে না হয়।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে টিউটোরিয়াল প্রেজেন্টেশন, মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষার সময় কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার নিয়ম রয়েছে। তবে অনেক নারী শিক্ষার্থী ধর্মীয় রীতিনীতি কঠোরভাবে পালন করায় এই নিয়ম মানতে চান না। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল নারী শিক্ষার্থীদের। ২০২২ সালে একই বিভাগে ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা মুখ দেখতে চাইলে পর্দা (নিকাব) করার কারণে এক নারী শিক্ষার্থী তাতে অসম্মতি জানিয়েছিলেন। সে ঘটনা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ  শহীদ হতে পারিনি, শহীদ পরিবারের সদস্য হতে চাই: জামায়াত আমির

এদিকে দুই বছর পর একই বিভাগে হিজাব-নিকাব নিয়ে ফের বিড়ম্বনা পড়া তাহমিনা আক্তার তামান্না এক স্ট্যাটাসে লেখেন, পরীক্ষা শুরুর পর স্যার খাতা সাইন করার সময় আসছেন। আমাকে এটেন্ডেন্স শিটে সাইন করতে দিয়ে মুখ খুলতে বলছেন। আমি আসলে কীভাবে না করব এটা বুঝতেছিলাম না। তাই দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে ছিলাম। স্যার বলছেন ‘বসো, বসে মুখ খুলো, চেক করতে হবে তো আমার।’ আমি মাথা নিচু করেই ছিলাম। আমার হাত কাঁপতেছিল। স্যার পরে বললেন ‘কোনো সমস্যা?’ আমি বলছি, জি স্যার। পরে স্যার বলছেন ‘মুখ খুলবে না?’ আমি আস্তে করে বলছি, জি না স্যার। তখন স্যার আমার থেকে এটেন্ডেন্স শিটটা নিয়ে আমার খাতাটা সাইন না করে দিয়ে দেন। বলেন ‘ঠিক আছে রাখো তোমারটা একটু পর সাইন করতেছি।’

পরীক্ষার হলে ঝামেলা শুরু কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, আমি আসলে বুঝেছি কিছু একটা ঝামেলা হবে। তখন লিখতে পারছি না। দেখলাম স্যাররা সামনে বসে আলোচনা করছেন। আমি বুঝছি আমার কথাই বলছেন। একটু পর চেয়ারম্যান স্যার ওঠে আসেন। তখন আমার পেছন থেকে ম্যাম দাঁড়ান এসে। এসময় আমাকে ম্যাম বলেন যে ‘কী ব্যাপার কোনো সমস্যা? স্যারকে সাইন করাতে দাও নাই কেন? কোনো সমস্যা? মুখ দেখাবে না?’ ম্যাম ভালো করেই জিজ্ঞেস করেছিলেন।

‘‘তখন আমার সারা শরীর কাঁপছিল। কারণ আমি ওতো সাহসী মানুষ না। মাথা নিচু করে ছিলাম। তখন ম্যাম বলেন তাকে দেখাতে। আমি একপাশ ফিরে ম্যামকে দেখাই। পরে ম্যাম সাইন করেন। পাশাপাশি অনেক কিছু বলছিলেন। ম্যাম বললেন, সব সময় তো মহিলা টিচার থাকবেন না। তখন চেয়ারম্যান স্যার বলেন, ‘ওকে জিজ্ঞেস করেন তো ও ভাইভাতে কী করবে?’ তখন ম্যাম আমাকে বলেন, ‘ভাইভাতে কী করবে? মুখ খুলবে না?’ তখন আমি মাথা নিচু করে না বলি। তখন ম্যাম বলেন যে, ভাইভা বোর্ডে তো মহিলা টিচার নাও থাকতে পারেন তখন? পরে চেয়ারম্যান স্যার বলেন, ‘ওর জন্য কি অন্য টিচাররা সব ভাইভা বোর্ড থেকে বের হয়ে যাবে? সে মুখ খুলবে না তাই চলে যাবে বের হয়ে? দেশটা যে কী হচ্ছে, নরক হয়ে গেছে দেশটা।’ আরও কিছু হয়তো আস্তে বলছেন; আমার মাথায় আর ঢুকছিল না।’’

আরও পড়ুনঃ  আপনি আ.লীগই রয়ে গেলেন, মানুষ হতে পারলেন না

পরীক্ষার মাঝখানে সেই সময় নার্ভাস হয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি লেখেন, আমার অলরেডি তখন চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তখন ম্যাম আমাকে বুঝাতে থাকেন ভালো করে যে পরীক্ষার তো একটা নিয়ম আছে। তুমি সেকেন্ড ইয়ার না? নিয়ম জানো না?” তখন ম্যাম আবার বলেন যে, ‘আমিও স্টুডেন্ট লাইফে মুখ ঢেকে রাখতাম, কিন্তু পরীক্ষার হলে আমাকে বলতে হতো না। আমি খুলে রাখতাম। একটা নিয়ম তো আছে। চেক করতে হবে তো।’ পরে ম্যাম কতক্ষণ বুঝালেন এবং বললেন, আরে এ তো কান্নাকাটি শুরু করছে। নার্ভাস হয়ে যেও না। এই ঘটনার প্রভাব যেন পরীক্ষায় না পড়ে। এখন পরীক্ষা দাও, আমরা এ বিষয়ে পরীক্ষার পর কথা বলবো। এরপর চলে যান। আমি পরীক্ষার পর আর ম্যামের সাথে দেখা করিনি। আমার বেশ খানিকটা সময় ওই কাহিনীতে চলে যায়। তারা চলে যাওয়ার পরও কান্না আসছিল। ভয় পেয়ে গেছিলাম। লিখতে পারছিলাম না। পরীক্ষা কেমন হয়েছে সেটা আর না বলি।

আরও পড়ুনঃ  মহিলা লীগের সেই নেত্রী অস্ত্রসহ আটক

এ ঘটনায় শিক্ষকদের দোষারোপ ‘না’ করে তিনি লেখেন, সত্যি কথা বলতে আমি জানতাম ঝামেলা হবে। আমার আসলে টিচারদের নিয়ে কিছু বলার নেই। কারণ উনারা বারবারই নিয়মের কথা বলেন। আর এটা সত্যিই যে নিয়মের মধ্যেই আসল ঝামেলাটা। আমি চাই নিয়মটা চেইঞ্জ হোক। একটা বিষয় বলি আমার টিচারদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আমি চাই সিস্টেমটা পরিবর্তন হোক। কোনো টিচারের কিছু হোক সেটা চাই না। কারণ টিচারের হাতে কিছু নেই। আমি চাই পরীক্ষার নিয়মটাই চেইঞ্জ করা হোক। নাহয় নেক্সট পরীক্ষায়ও এটা ফেইস করা লাগবে, ভাইভাতেও। টিচারদের বিরুদ্ধে না কথা বলা উচিৎ সিস্টেমটা নিয়ে।

সবশেষে তিনি লেখেন, আবারও বলছি আমি টিচারদের নিয়ে কিছু বলতে চাই না, উনাদের বিপক্ষে কিছু করতেও চাই না। শুধু চাই ভার্সিটির সকল ডিপার্টমেন্টে ক্লাসে, পরীক্ষা, ভাইভা, টিউটোরিয়ালে যারা হিজাব-নিকাব পরে তাদের কোনো সমস্যা যেন আর না হয়৷ চেক করার জন্য যেন অন্য কোনো ওয়ে রাখা হয় সেটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। এটার একটা সমাধান হওয়া উচিৎ সেন্ট্রালি। আমি আমার বিভাগের দোষ দিব না। পরীক্ষার নিয়মটাই চেইঞ্জ হোক। হিজাব-নিকাব পরা আমারসহ প্রত্যেকটা মেয়ের স্বাধীনতা হোক।

সর্বশেষ সংবাদ